আপনার শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করুন: রান্নাঘরের খেলনার নিরাপত্তা যাচাইয়ের ৫টি সহজ উপায়

webmaster

주방완구 안전 인증 확인법 - **Prompt:** A close-up, high-angle shot focusing on a seemingly vibrant and glossy plastic toy car, ...

ছোট্ট সোনামণিদের হাতে যখন দেখি তাদের প্রিয় রান্নাঘরের খেলনা, তখন মনটা খুশিতে ভরে ওঠে, তাই না? কিন্তু একইসাথে একটা ছোট্ট চিন্তাও উঁকি দেয় – খেলনাটা কতটা নিরাপদ?

주방완구 안전 인증 확인법 관련 이미지 1

আজকাল বাজারে কত রকম খেলনা! আর সবগুলোর মান বা নিরাপত্তা একই রকম হয় না, বিশেষ করে বাচ্চাদের খেলার জিনিস কেনার সময় আমাদের সবারই একটু বেশি সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, তাদের সুস্থতা আর নিরাপত্তা আমাদের কাছে সবার আগে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনেক সময় আমরা শুধু দেখতে সুন্দর হলেই খেলনা কিনে ফেলি, কিন্তু এর পেছনের সুরক্ষা মানদণ্ডগুলো সম্পর্কে খোঁজ রাখি না। বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থযুক্ত খেলনা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যেমন সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম এবং ব্রোমিনের মতো ভারী ধাতু মস্তিষ্কের বিকাশ এবং স্নায়ুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমনকি কিছু খেলনায় ক্ষতিকর থ্যালেটস এবং পিভিসিও থাকে। এটি কেবল একটি স্বাস্থ্য সংকট নয়, এটি শিশুদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।আর এখানেই আসে খেলনার নিরাপত্তা সার্টিফিকেশন যাচাই করার গুরুত্ব। ভাবছেন, এটা কি খুব কঠিন কাজ?

একদমই না! চলুন, তাহলে দেরি না করে জেনে নিই, কিভাবে আপনি আপনার সোনামণির জন্য সবচেয়ে নিরাপদ রান্নাঘরের খেলনাটি বেছে নেবেন এবং এর পেছনের সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন। নিচের লেখায় এর বিস্তারিত জেনে নিই।

শুধু সুন্দর নয়, চাই সুরক্ষাও: ছোট্ট সোনামণিদের খেলনার আসল গল্প

চোখের দেখায় মন ভুলো না: কেন সতর্কতা জরুরি

আমাদের সবারই একটা সহজাত প্রবণতা আছে, তাই না? বাচ্চাদের জন্য কিছু কিনতে গেলে সবার আগে চোখ যায় তার রঙে, রূপে আর কতটা নতুনত্ব আছে তাতে। আমিও তো প্রথম প্রথম ঠিক এমনই ছিলাম। দোকানে গিয়ে হাজারটা খেলনার ভিড়ে যেটা সবচেয়ে ঝলমলে আর আকর্ষণীয় দেখাত, সেটাই প্রায় চোখ বন্ধ করে তুলে নিতাম। ভাবতাম, আমার সোনাটার মুখে হাসি ফোটালেই তো সব কাজ শেষ!

কিন্তু সত্যি বলতে কী, সেই হাসিটার আড়ালে যে কত বড় ঝুঁকি লুকিয়ে থাকতে পারে, সেটা প্রথম দিকে আমি বুঝতেই পারিনি। এখন যেমন চারিদিকে এত নতুন নতুন প্রযুক্তি আর উপকরণ, তেমনি বাচ্চাদের খেলনার জগতেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই পরিবর্তনের মধ্যে অনেক সময়ই লুকিয়ে থাকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি, যারা শুধু লাভের লোভে বাচ্চাদের স্বাস্থ্য আর সুরক্ষাকে উপেক্ষা করে যায়। তাই শুধু সুন্দর হলেই চলবে না, খেলনাটা আমার বাচ্চার জন্য কতটা নিরাপদ, সেটা যাচাই করাটা এখন সময়ের দাবি। এটা কেবল একটা কেনাকাটার বিষয় নয়, এটা আমাদের সন্তানের ভবিষ্যতের সাথে জড়িত।

আমার মায়ের অভিজ্ঞতা: এক ভুল থেকে শিক্ষা

একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি। আমার যখন ছোট ছিলাম, আমার মা একবার আমাকে একটা খুব সুন্দর পুতুল কিনে দিয়েছিলেন। পুতুলটা দেখতে এতটাই আকর্ষণীয় ছিল যে আমি দিনরাত সেটা নিয়ে খেলতাম। কিন্তু কিছুদিন পর দেখা গেল আমার হাতের কিছু জায়গায় অদ্ভুত রকম র‍্যাশ বেরিয়েছে, যা সহজে সারছিল না। পরে যখন ডাক্তার দেখানো হলো, তিনি বললেন এটা কোনো অ্যালার্জির কারণে হয়েছে, সম্ভবত পুতুলের রঙ বা উপাদান থেকে। তখন তো আর এত সচেতনতা ছিল না। কিন্তু এখন আমি যখন নিজে মা হয়েছি, তখন মায়ের সেই অভিজ্ঞতাটা আমাকে ভীষণভাবে ভাবায়। আমার সন্তান যেন এমন কোনো বিপদের মুখে না পড়ে, সেই চিন্তাটা আমাকে সব সময় তাড়িয়ে বেড়ায়। বিশেষ করে রান্নাঘরের খেলনা, যেগুলি বাচ্চারা মুখেও দিতে পারে, সেগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে আমি আর কোনো আপস করতে রাজি নই। এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলোই আসলে আমাদের আরও সতর্ক করে তোলে।

কেন এই আলোচনাটা এত গুরুত্বপূর্ণ?

আসলে, এই আলোচনাটা শুধুমাত্র খেলনা কেনা নিয়ে নয়। এটা আমাদের সন্তানদের প্রতি আমাদের গভীর দায়িত্ববোধের একটা অংশ। আমরা সবাই চাই আমাদের শিশুরা যেন নিরাপদে বেড়ে ওঠে, সুস্থ থাকে। আর তাদের শৈশবের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে খেলনা। যদি সেই খেলনাই তাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেটা খুবই দুঃখজনক। খেলনার বিষাক্ত উপাদানগুলো শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ থেকে শুরু করে স্নায়ুতন্ত্র পর্যন্ত মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব তো আছেই। তাই খেলনা কেনার আগে একটু সময় নিয়ে এর নিরাপত্তা মানদণ্ড, ব্যবহৃত উপাদান, এবং সার্টিফিকেশনগুলো যাচাই করে নেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সচেতনতা শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের জন্য নয়, আমাদের চারপাশের অন্যান্য বাবা-মায়ের মধ্যেও ছড়িয়ে দেওয়াটা আমাদের সবার দায়িত্ব। একটা ছোট্ট ভুল সিদ্ধান্ত আমাদের সন্তানের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।

খেলনায় লুকিয়ে থাকা নীরব ঘাতক: ক্ষতিকর রাসায়নিকের চেনা-অচেনা দিক

সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম: বিষাক্ত পদার্থের তালিকা

আমরা যখন বাচ্চাদের জন্য খেলনা কিনি, তখন সেটার উজ্জ্বল রঙ, আকর্ষণীয় ডিজাইন দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। কিন্তু এই ঝলমলে রঙের আড়ালে যে কত মারাত্মক বিপদ লুকিয়ে থাকতে পারে, তা আমরা হয়তো অনেকেই জানি না। সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম – এই নামগুলো শুনলেই গা ছমছম করে ওঠে, তাই না?

কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই বিষাক্ত পদার্থগুলো প্রায়শই সস্তা বা নিম্নমানের খেলনায় ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে চীন বা অন্য কিছু দেশ থেকে আসা খেলনায়, যেখানে নিরাপত্তা মানদণ্ড ততটা কড়া নয়, সেখানে এই ধাতুগুলো পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সিসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটায়, তাদের শেখার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং আচরণগত সমস্যা তৈরি করে। পারদ স্নায়ুতন্ত্র এবং কিডনির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, আর ক্যাডমিয়াম দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার, কিডনি এবং হাড়ের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ভাবুন তো, আপনার ছোট্ট সোনামণি যখন মুখ দিয়ে খেলনাটা মুখে নিচ্ছে, তখন এই বিষাক্ত পদার্থগুলো ধীরে ধীরে তার শরীরে প্রবেশ করছে!

এটা কোনো কল্পকাহিনী নয়, এটাই কঠিন বাস্তবতা। আমার নিজের চোখে দেখা কিছু ঘটনায় বাবা-মা এই বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন, যা আমাকে ভীষণভাবে কষ্ট দিয়েছে।

থ্যালেটস ও পিভিসি: আরও কিছু লুকানো বিপদ

শুধু ভারী ধাতুই নয়, আরও কিছু রাসায়নিক পদার্থ আছে যা খেলনার মাধ্যমে আমাদের শিশুদের ক্ষতি করতে পারে। থ্যালেটস এবং পিভিসি (পলিভিনাইল ক্লোরাইড) তার মধ্যে অন্যতম। থ্যালেটস হলো এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ যা প্লাস্টিককে নরম ও নমনীয় করতে ব্যবহার করা হয়। বাচ্চাদের নরম রাবারের খেলনা, বিশেষ করে যেগুলি সহজে বাঁকানো যায় বা চিবানো যায়, সেগুলিতে থ্যালেটস থাকার সম্ভাবনা বেশি। এই থ্যালেটস শিশুদের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং এমনকি астমা ও অ্যালার্জির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অন্যদিকে, পিভিসি হলো এক ধরণের প্লাস্টিক, যা খেলনার স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু পিভিসি উৎপাদনের সময় এবং পরবর্তীতেও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করতে পারে, যা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়। আমি দেখেছি অনেক অভিভাবক শুধু খেলনার নরম অনুভব বা দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য এই ধরণের খেলনা বেছে নেন, কিন্তু এর পেছনে লুকানো বিপদ সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখেন না। তাদের সচেতন করাটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।

এই রাসায়নিকগুলো শিশুদের কী ক্ষতি করতে পারে?

এই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থগুলো শিশুদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেহেতু শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে এবং তাদের শরীর দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাই তারা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে থাকে। মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা, শেখার অক্ষমতা, মনোযোগের অভাব, আচরণগত সমস্যা, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, কিডনি এবং লিভারের সমস্যা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও এই বিষাক্ত খেলনার কারণে বাড়তে পারে। কল্পনা করুন, আপনার শিশু যখন তার প্রিয় রান্নাঘরের খেলনা নিয়ে রান্না করার ভান করছে, তখন তার ছোট হাতের মাধ্যমে এই বিষাক্ত পদার্থগুলো তার শরীরে প্রবেশ করছে। এটা শুধুমাত্র একটি শারীরিক সংকট নয়, এটি শিশুদের মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশেও বাধা দেয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, শিশুদের শরীর ছোট হলেও তাদের সম্ভাবনা অনেক বড়। এই সম্ভাবনাকে আমাদের কোনো বিষাক্ত খেলনার কারণে নষ্ট হতে দেওয়া চলবে না। তাই, খেলনা কেনার সময় আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে এবং এমন খেলনা বেছে নিতে হবে যা তাদের খেলার আনন্দকে সুস্থতার সাথে যুক্ত করবে।

ক্ষতিকর রাসায়নিক সাধারণ উৎস শিশুদের স্বাস্থ্যে প্রভাব
সিসা (Lead) পুরানো রঙ, কিছু সস্তা প্লাস্টিকের খেলনা, ধাতব অংশ মস্তিষ্কের ক্ষতি, শেখার ক্ষমতা হ্রাস, আচরণগত সমস্যা, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি
পারদ (Mercury) কিছু থার্মোমিটার, পুরোনো খেলনা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, কিডনি ও লিভারের সমস্যা, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস
ক্যাডমিয়াম (Cadmium) কিছু সস্তা গহনা, রঙিন প্লাস্টিকের খেলনা, ব্যাটারি কিডনি ও হাড়ের ক্ষতি, ফুসফুসের সমস্যা, ক্যান্সার ঝুঁকি, বিকাশের উপর প্রভাব
থ্যালেটস (Phthalates) নরম প্লাস্টিকের খেলনা (যেমন, রাবারের পুতুল, টিথার), PVC পণ্য হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব, астমা ও অ্যালার্জির ঝুঁকি বৃদ্ধি
ব্রোমিন (Bromine) ফ্লেম রিটার্ডেন্ট যুক্ত খেলনা (Flame retardant) থাইরয়েড ফাংশন প্রভাবিত করা, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা
Advertisement

খেলনার সুরক্ষা মানদণ্ড: কোন চিহ্ন দেখে কিনবেন?

ISI মার্ক থেকে CE: বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত সার্টিফিকেশন

যখন আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য খেলনা কিনি, তখন আমাদের মনে প্রায়শই একটা প্রশ্ন আসে, “এই খেলনাটা কি আসলেই নিরাপদ?” এই প্রশ্নের উত্তর পেতে সাহায্য করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সুরক্ষা সার্টিফিকেশন। ভাবুন তো, একটা পণ্য যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কঠিন মানদণ্ড পেরিয়ে আসে, তখন তার উপর ভরসা রাখাটা অনেক সহজ হয়ে যায়, তাই না?

CE (Conformité Européenne) মার্ক হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সুরক্ষা মানদণ্ড। এর মানে হলো, খেলনাটি ইউরোপের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত সুরক্ষার নিয়মাবলী মেনে তৈরি হয়েছে। এই চিহ্নটি দেখলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, খেলনাটি নির্দিষ্ট সুরক্ষা পরীক্ষা পাস করেছে। একইভাবে, আমেরিকান ASTM F963 বা কানাডিয়ান SOR/2011-17 নিরাপত্তা মানদণ্ডগুলোও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং খুবই কঠোর। আমি যখন প্রথম এই চিহ্নগুলো সম্পর্কে জানতে পারলাম, তখন আমার খেলনা কেনার ধরণটাই বদলে গেল। এখন আমি শুধু রঙ বা ডিজাইন দেখি না, সবার আগে দেখি এই ধরনের কোনো আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন আছে কিনা। এটা আমাকে অনেক নিশ্চিন্ত থাকতে সাহায্য করে।

বিএসটিআই: আমাদের দেশের ভরসা

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের পাশাপাশি আমাদের নিজেদের দেশেরও একটা সুরক্ষা মানদণ্ড আছে, যেটা হলো বিএসটিআই (Bangladesh Standards and Testing Institution)। ভাবছেন, আমাদের দেশের মানদণ্ড কতটা নির্ভরযোগ্য?

সত্যি বলতে কি, বিএসটিআই বাংলাদেশের পণ্যগুলির মান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে থাকে। যখন কোনো খেলনার গায়ে বিএসটিআই মার্ক দেখেন, তখন তার মানে হলো খেলনাটি বাংলাদেশের জাতীয় মান অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়েছে এবং নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডগুলো প্রায়শই আরও কঠোর হয়, তবুও বিএসটিআই মার্ক থাকা মানে খেলনাটি স্থানীয় স্তরে অন্ততপক্ষে একটি নির্দিষ্ট মান বজায় রাখে। বিশেষ করে যখন আপনি স্থানীয় বাজার থেকে খেলনা কিনছেন, তখন এই চিহ্নটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করি, আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশনযুক্ত খেলনা কিনতে, কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে বিএসটিআই মার্কযুক্ত খেলনা অন্ততপক্ষে একটি মৌলিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এই বিষয়গুলো বাবা-মা হিসেবে আমাদের জানা থাকাটা খুবই জরুরি।

সার্টিফিকেশন না থাকলে কী করবেন?

সব খেলনার গায়ে যে আপনি এই ধরনের সার্টিফিকেশন মার্ক দেখতে পাবেন, এমনটা নাও হতে পারে। বিশেষ করে ছোট দোকান বা ফুটপাথ থেকে কেনা খেলনাগুলিতে প্রায়শই কোনো সুরক্ষা চিহ্ন থাকে না। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা উচিত?

আমার মতে, যদি কোনো খেলনার গায়ে স্পষ্ট কোনো সুরক্ষা সার্টিফিকেশন মার্ক না থাকে, তাহলে সেই খেলনাটি না কেনাই ভালো। আপনার বাচ্চার স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার সাথে কোনো আপস করা উচিত নয়। এমন খেলনাতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। আমি একবার আমার এক বন্ধুর বাচ্চাকে দেখেছিলাম, কোনো সার্টিফিকেটবিহীন একটি খেলনা নিয়ে খেলতে খেলতে তার মুখ চুলকাতে শুরু করে। পরে জানা গেল খেলনায় ব্যবহৃত রঙ তার ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি করেছে। এই ধরনের ঘটনাগুলো আমাদেরকে আরও বেশি সতর্ক করে তোলে। এছাড়াও, খেলনার উপাদান, গন্ধ এবং তৈরির মান দেখেও কিছুটা অনুমান করা যায়। যদি খেলনাতে কোনো অস্বাভাবিক বা কড়া রাসায়নিক গন্ধ থাকে, অথবা যদি খেলনাটি খুব ভঙ্গুর মনে হয়, তাহলে সেটি কেনা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন, সস্তায় খেলনা কিনতে গিয়ে যেন আপনার সোনামণির স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে না ফেলেন।

আমার নিজস্ব কিছু টিপস: নিরাপদ খেলনা বাছার সহজ উপায়

কেনার আগে হাতে নিয়ে পরখ করুন

যখন আমরা দোকানে যাই, চোখ দিয়ে শত শত খেলনা দেখি। কিন্তু শুধু দেখলেই তো আর হবে না, তাই না? খেলনাটা হাতে নিয়ে পরখ করাটা খুবই জরুরি। ভাবুন তো, আপনি একটা রান্নাঘরের সেট কিনছেন, যেখানে ছোট ছোট সবজি, হাঁড়ি-পাতিল আছে। সেগুলো ঠিকঠাক মসৃণ কিনা, কোনো তীক্ষ্ণ ধার আছে কিনা, বা কোনো ছোট অংশ সহজেই খুলে যাচ্ছে কিনা, সেটা খুঁটিয়ে দেখতে হবে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একবার আমি আমার ভাগ্নির জন্য একটা খেলনা গাড়ি কিনেছিলাম, যেটা দেখতে খুব সুন্দর ছিল। কিন্তু বাড়িতে এনে দেখি গাড়ির চাকাটা খুব আলগা, অল্পতেই খুলে যায়। ভাগ্যিস বাচ্চাটা তখনো ছোট ছিল, তাই মুখে দেওয়ার সুযোগ পায়নি। কিন্তু একটু বড় বাচ্চারা হলে সেটা মুখে পুরে ফেলতে পারত, আর তাতে বিপদ হতে পারত। তাই খেলনা কেনার আগে সেটার প্রতিটি অংশ হাত দিয়ে ছুঁয়ে, টেনে, নাড়াচাড়া করে ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন। খেলনাটা মজবুত কিনা, এর জোড়াগুলো ঠিক আছে কিনা, রঙ উঠে যাচ্ছে কিনা – এই সব ছোট ছোট জিনিসগুলো কিন্তু অনেক বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।

দামের চেয়ে মানকে অগ্রাধিকার দিন

আমরা অনেকেই মনে করি, যে খেলনাটা দামি, সেটাই হয়তো ভালো মানের। আবার অনেকে সস্তা খেলনার দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, খেলনার দাম আর তার মান সব সময় সমানুপাতিক হয় না। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, অনেক সময় কম দামের খেলনাতে এমন সব ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা আমাদের ধারণার বাইরে। আবার অনেক সময় দামি খেলনাতেও এমন ত্রুটি থাকতে পারে যা বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ নয়। তাই দামের দিকে না তাকিয়ে, খেলনার মানকে প্রাধান্য দিন। একটা খেলনা কিনার আগে এর উপকরণ, তৈরির প্রক্রিয়া এবং নিরাপত্তা সার্টিফিকেশনগুলো যাচাই করুন। প্রয়োজনে একটু বেশি টাকা খরচ করতে পিছপা হবেন না। আমার কাছে মনে হয়, আপনার সন্তানের সুস্থতার চেয়ে বড় আর কোনো সম্পদ নেই। একটা খেলনা হয়তো কয়েক মাসের জন্য আনন্দ দেবে, কিন্তু তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সারা জীবনের জন্য। তাই, দু’পয়সা বাঁচাতে গিয়ে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না। আমি সবসময় চেষ্টা করি, কম খেলনা কিনলেও যেন সেটা ভালো মানের হয়, যেটা আমার বাচ্চার জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।

অনলাইনে কেনার সময় সতর্কতা

এখন তো অনলাইনের যুগ! ঘরে বসেই আমরা হাজারো পণ্য অর্ডার করতে পারি। খেলনার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। অনলাইনে খেলনা কেনাটা যেমন সুবিধাজনক, তেমনই এতে কিছু ঝুঁকিও থাকে। দোকানে যেখানে আমরা খেলনা হাতে নিয়ে পরখ করতে পারি, অনলাইনে সেই সুযোগটা থাকে না। তাই অনলাইনে খেলনা কেনার সময় আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। আমি নিজে যখন অনলাইনে কিনি, তখন প্রথমে পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ খুব ভালোভাবে পড়ি। ব্যবহৃত উপকরণ কী কী, কোনো সার্টিফিকেশন আছে কিনা, সেটা দেখি। এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটা করি, সেটা হলো অন্যান্য ক্রেতাদের রিভিউ বা প্রতিক্রিয়াগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ি। অনেকেই তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, যা থেকে খেলনার মান সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পাওয়া যায়। যদি কোনো খেলনাতে নেতিবাচক রিভিউ বেশি থাকে, বা যদি কোনো রিভিউতে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে আমি সেটা কেনা থেকে বিরত থাকি। এছাড়াও, বিশ্বস্ত এবং পরিচিত অনলাইন স্টোর বা ব্র্যান্ড থেকে কেনা উচিত, যারা পণ্যের গুণগত মান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কোনো অফার বা ডিসকাউন্টের ফাঁদে পড়ে যাচাই না করে খেলনা কিনবেন না।

Advertisement

ছোটবেলার খেলার জগত: নিরাপদ খেলনার সুদূরপ্রসারী প্রভাব

মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সঠিক খেলনার ভূমিকা

ছোট্ট সোনামণিদের জগতটা খেলনাময়। তারা খেলে, হাসে, শেখে – আর এই শেখার প্রক্রিয়াটা খেলনার মাধ্যমেই অনেকটা এগিয়ে চলে। আমরা যখন নিরাপদ এবং উপযুক্ত খেলনা বেছে নিই, তখন সেটা কেবল তাদের মনোরঞ্জনই করে না, বরং তাদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রান্নাঘরের খেলনা সেটের কথাই ধরুন। শিশুরা যখন শেফ সেজে নিজেদের মতো করে রান্না করে, তখন তাদের কল্পনাশক্তি বাড়ে। তারা বিভিন্ন জিনিসপত্র চিনতে শেখে, রঙের ধারণা পায়, এবং হাতে-কলমে কাজ করার মাধ্যমে তাদের সূক্ষ্ম মোটর দক্ষতা উন্নত হয়। সঠিক খেলনা তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়, সামাজিক দক্ষতা বিকাশে সাহায্য করে এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি করে। আমার মেয়ে যখন তার খেলনা দিয়ে নিজের মতো করে রান্না করে, তখন আমি দেখি সে কত নতুন নতুন গল্প তৈরি করে, বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে খেলে। এটা তার সৃজনশীলতাকে অনেক বাড়িয়ে তোলে। এর উল্টোটা ভাবুন, যদি খেলনাটা নিম্নমানের হয়, যদি বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে, তাহলে কি এই বিকাশের প্রক্রিয়াটা সঠিকভাবে এগোবে?

কখনোই না! বরং উল্টে তার স্বাস্থ্য খারাপ হবে, যা তার ভবিষ্যৎ বিকাশে বাধা দেবে।

주방완구 안전 인증 확인법 관련 이미지 2

বিষাক্ত খেলনার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি

এটা তো আমরা সবাই জানি যে, বিষাক্ত খেলনা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এর ক্ষতিটা শুধু তাৎক্ষণিক নয়, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলো আরও মারাত্মক হতে পারে। ভাবুন তো, শৈশবে যদি একটি শিশু নিয়মিত সিসাযুক্ত খেলনা নিয়ে খেলে, তাহলে তার মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে তার শেখার ক্ষমতা কমে যাবে, স্কুলে ভালো ফল করতে পারবে না এবং আচরণগত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আমার পরিচিত এক পরিবারে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে বাচ্চাটির বারবার অসুস্থতা এবং মনোযোগের অভাবে তারা চিন্তিত ছিলেন। পরে দেখা গেল, তার প্রিয় খেলনাগুলোতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ছিল, যা তার স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলছিল। থ্যালেটস এবং পিভিসি-এর মতো রাসায়নিকগুলো হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি ক্যান্সার বা অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। শিশুদের শরীর এখনো দুর্বল থাকে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে, তাই প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে তাদের উপর এই বিষাক্ত পদার্থের প্রভাব অনেক বেশি হয়। একটি বিষাক্ত খেলনা তাদের শৈশবের আনন্দকে কেড়ে নিয়ে ভবিষ্যৎ জীবনকে কঠিন করে তুলতে পারে।

আমাদের দায়িত্ব: একটি সুস্থ শৈশব নিশ্চিত করা

আমার মতে, একটি সুস্থ শৈশব নিশ্চিত করা শুধুমাত্র সরকারি বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের প্রত্যেক বাবা-মায়ের ব্যক্তিগত দায়িত্ব। আমরাই প্রথম সুরক্ষা স্তর। আমাদের একটু সচেতনতা, একটু খোঁজ-খবর, আমাদের সন্তানের জীবনে অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। আমরা যখন নিরাপদ খেলনা বেছে নিই, তখন আমরা কেবল তাদের স্বাস্থ্যই রক্ষা করি না, আমরা তাদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার পথটাকেও সুগম করি। এটা এক প্রকার বিনিয়োগ। ভবিষ্যতের সুস্থ, বুদ্ধিমান এবং আত্মবিশ্বাসী নাগরিক তৈরির বিনিয়োগ। আমি নিজে যখনই কোনো খেলনা কিনি, তখন মনে মনে ভাবি, এই খেলনাটা আমার বাচ্চার জীবনে কী প্রভাব ফেলবে?

এটা কি তার আনন্দ বাড়াবে, নাকি তার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে? এই প্রশ্নগুলোই আমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই সচেতনতার আলোটা ছড়িয়ে দিই, যাতে আমাদের কোনো শিশুর শৈশব যেন কোনো বিষাক্ত খেলনার কারণে বিষাক্ত না হয়ে ওঠে। প্রতিটি শিশু যেন হাসতে হাসতে, খেলতে খেলতে একটি সুস্থ ও সুন্দর শৈশব উপভোগ করতে পারে – এটাই আমাদের সবার চাওয়া।

বিশ্বাসযোগ্য উৎস কোথায়? সেরা খেলনা কেনার ঠিকানা

নামকরা ব্র্যান্ড এবং নির্ভরযোগ্য দোকান

যখন নিরাপদ খেলনা কেনার কথা আসে, তখন সবচেয়ে প্রথম যে জিনিসটা মাথায় আসে সেটা হলো, “কোথা থেকে কিনবো?” আজকাল বাজারে এত রকম খেলনা, এত দোকান! কিন্তু সব দোকান বা সব ব্র্যান্ড কি এক রকম ভরসাযোগ্য?

অবশ্যই না। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, নামকরা ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত তাদের পণ্যের গুণগত মান এবং নিরাপত্তা নিয়ে অনেক বেশি সতর্ক থাকে। তারা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলে এবং তাদের খেলনাগুলো বিভিন্ন সুরক্ষা পরীক্ষা পেরিয়ে আসে। তাই খেলনা কেনার সময় পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলো বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন, Fisher-Price, LEGO, Melissa & Doug-এর মতো ব্র্যান্ডগুলো বিশ্বজুড়ে তাদের খেলনার মান এবং নিরাপত্তার জন্য পরিচিত। এছাড়াও, নির্ভরযোগ্য দোকানগুলো, যেমন বড় সুপারস্টোর বা প্রতিষ্ঠিত খেলনার দোকান, যারা সরাসরি ব্র্যান্ডের ডিলার, তাদের থেকে কেনাটাও নিরাপদ। এসব দোকানে নকল পণ্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং তারা সাধারণত পণ্যের ওয়ারেন্টি বা ফেরত নীতির বিষয়ে স্বচ্ছ থাকে। আমি সবসময় চেষ্টা করি এমন দোকান থেকে কিনতে, যেখানে আমি পণ্য হাতে নিয়ে ভালোভাবে দেখতে পারি এবং প্রয়োজনে দোকান কর্মীদের কাছ থেকে তথ্য নিতে পারি।

Advertisement

অনলাইন কেনাকাটার জন্য বিশেষ টিপস

অনলাইনে কেনাকাটা এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু খেলনার ক্ষেত্রে অনলাইনে কিনতে গেলে একটু বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কারণ অনলাইনে আমরা পণ্যটা সরাসরি ছুঁয়ে দেখতে পারি না। তাই আমি যখন অনলাইনে খেলনা কিনি, তখন কিছু নিয়ম মেনে চলি। প্রথমত, আমি শুধুমাত্র পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করি। যেমন Amazon, Daraz বা সরাসরি ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইট। দ্বিতীয়ত, পণ্যের বিবরণ (product description) খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ি। খেলনার উপাদান, বয়স সীমা, সুরক্ষা সার্টিফিকেশন – এই সবকিছু ভালোভাবে যাচাই করে নিই। তৃতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমি অন্যান্য ক্রেতাদের রিভিউ এবং রেটিংগুলো খুব ভালোভাবে পড়ি। অনেকেই খেলনার গুণগত মান, নিরাপত্তা বা ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিস্তারিত লেখেন, যা আমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। যদি কোনো খেলনাতে অনেক নেতিবাচক রিভিউ থাকে বা যদি নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে, তাহলে আমি সেটা কেনা থেকে বিরত থাকি। এছাড়াও, বিক্রেতার (seller) রেটিং এবং তার বিক্রিত অন্যান্য পণ্যের মানও দেখে নিই। যদি কোনো বিক্রেতার রেটিং কম হয় বা তার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য থাকে, তাহলে তার কাছ থেকে কিনবো না।

পুরানো খেলনা ব্যবহারে সতর্কতা

অনেক সময় আমাদের আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের কাছ থেকে আমরা তাদের বাচ্চাদের পুরোনো খেলনা পেয়ে থাকি। আবার অনেকে পুরানো খেলনা সস্তায় কিনেও থাকেন। পুরানো খেলনা ব্যবহার করাটা একদিক থেকে ভালো, কারণ এতে রিসাইক্লিং হয় এবং খরচও বাঁচে। কিন্তু এখানেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। পুরানো খেলনাগুলি কেনার আগে অবশ্যই ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন। এতে কোনো ভাঙা অংশ আছে কিনা, তীক্ষ্ণ ধার আছে কিনা, বা কোনো ছোট অংশ খুলে যাচ্ছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করুন। পুরনো খেলনাতে সিসা যুক্ত পেইন্ট বা অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকার ঝুঁকি থাকে, বিশেষ করে যদি খেলনাগুলো অনেক পুরোনো হয় এবং তাদের উৎপাদন মান সম্পর্কে কোনো তথ্য না থাকে। এছাড়াও, খেলনাগুলো ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করে নিন, কারণ এতে পুরোনো ময়লা বা জীবাণু থাকতে পারে। আমি যখন কোনো পুরানো খেলনা পাই, তখন প্রথমে সেটা ভালোভাবে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নেই এবং স্যানিটাইজার দিয়ে মুছে নেই। যদি খেলনাতে কোনো ফাটল বা ভাঙা অংশ থাকে, যা বাচ্চাকে আঘাত করতে পারে, তাহলে সেটা ব্যবহার না করাই ভালো। মনে রাখবেন, সস্তায় বা বিনামূল্যে কিছু পেতে গিয়ে আপনার সোনামণির স্বাস্থ্যকে বিপদে ফেলবেন না।

লেখাটি শেষ করছি

সত্যি বলতে, এই দীর্ঘ আলোচনাটা কেবল কিছু তথ্য দেওয়া নয়, এর পেছনে লুকিয়ে আছে একজন মায়ের উদ্বেগ আর ভালোবাসা। আমি জানি, প্রতিটি বাবা-মা চান তাদের সন্তান যেন পৃথিবীর সব আনন্দ নিয়ে বেড়ে ওঠে। তাই খেলনা কেনার মতো ছোট একটি সিদ্ধান্তকেও আমাদের অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা আর যত তথ্য আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম, আশা করি তা আপনাদের ছোট্ট সোনামণিদের জন্য আরও নিরাপদ একটি শৈশব গড়তে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, খেলনা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি তাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গী। আর এই সঙ্গীটি যেন বিষমুক্ত আর নিরাপদ হয়, সেই দায়িত্ব আমাদের সবার।

আমার বিশ্বাস, একটু সচেতনতা, একটু খোঁজ-খবরই আপনার সন্তানের মুখে সত্যিকারের হাসি ফোটাতে পারে, যে হাসিতে কোনো ঝুঁকি বা লুকানো ভয় থাকবে না। তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার প্রথম ধাপটি কিন্তু আমাদের হাতেই। তাই আসুন, সবাই মিলে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিই এবং আমাদের শিশুদের জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবীর স্বপ্ন বুনি।

আলচনা থেকে কিছু জরুরি তথ্য

১. খেলনা কেনার সময় অবশ্যই CE, ASTM F963, SOR/2011-17, বা বিএসটিআই-এর মতো আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সুরক্ষা সার্টিফিকেশনগুলো দেখে কিনুন। এই চিহ্নগুলো খেলনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

২. সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, থ্যালেটস এবং পিভিসি-এর মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থগুলো শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ, স্নায়ুতন্ত্র এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, তাই এই উপাদানগুলি বর্জন করা উচিত।

৩. খেলনার দামের চেয়ে তার মানকে অগ্রাধিকার দিন। সস্তা খেলনাতে প্রায়শই নিম্নমানের উপাদান এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।

৪. অনলাইনে খেলনা কেনার সময় পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ, ব্যবহৃত উপকরণ এবং অন্যান্য ক্রেতাদের রিভিউ ও রেটিংগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। বিশ্বস্ত বিক্রেতা এবং প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা করুন।

৫. খেলনাতে অস্বাভাবিক বা কড়া রাসায়নিক গন্ধ থাকলে অথবা খেলনাটি ভঙ্গুর মনে হলে সেটি কেনা থেকে বিরত থাকুন। ছোট বাচ্চাদের জন্য ছোট বা আলগা অংশযুক্ত খেলনা পরিহার করুন, কারণ এতে শ্বাসরোধের ঝুঁকি থাকে।

Advertisement

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ

শিশুদের খেলনার নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের সবারই আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত। বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থযুক্ত খেলনাগুলি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই, খেলনা কেনার সময় সুরক্ষা মানদণ্ড, ব্যবহৃত উপাদান এবং আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশনগুলো যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো সতর্কতার সাথে খেলনা নির্বাচন করা, মানকে প্রাধান্য দেওয়া এবং অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করা। শিশুদের সুস্থ ও সুন্দর শৈশব নিশ্চিত করতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা একান্ত প্রয়োজন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: শিশুদের রান্নাঘরের খেলনায় সাধারণত কোন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে এবং এগুলো কিভাবে তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে?

উ: আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যখন বাজারে যাই, তখন অনেক ঝলমলে খেলনা দেখি। কিন্তু মনটা একটু খুঁতখুঁত করে, ভেতরে কী আছে কে জানে! শিশুদের রান্নাঘরের খেলনায় আসলে অনেক ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকতে পারে, যা তাদের ছোট্ট শরীর আর বিকাশের জন্য ভীষণ বিপজ্জনক। যেমন, সিসা (Lead) একটা বড় সমস্যা। এটা শুধু মস্তিষ্কের বিকাশই নয়, স্নায়ুতন্ত্র আর কিডনিরও মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। ছোটবেলায় সিসার সংস্পর্শে এলে শেখার ক্ষমতা কমে যাওয়া বা আচরণের পরিবর্তনও হতে পারে, যা আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক বাবা-মার মুখে শুনেছি। এছাড়া, থ্যালেটস (Phthalates) নামের এক ধরনের রাসায়নিকও খুব সাধারণ। খেলনাকে নরম আর নমনীয় করতে এটা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা শিশুদের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পারদ (Mercury) বা ক্যাডমিয়াম (Cadmium)-এর মতো ভারী ধাতুও কিছু নিচু মানের খেলনায় পাওয়া যায়, যা শিশুদের স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এমনকি কিছু প্লাস্টিকের খেলনায় বিপিএ (BPA) বা পিভিসি (PVC)-ও থাকতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। তাই খেলনা কেনার সময় শুধু দেখতে সুন্দর হলেই হবে না, এর ভেতরের উপাদানগুলো সম্পর্কেও আমাদের সচেতন থাকাটা ভীষণ জরুরি।

প্র: শিশুদের রান্নাঘরের খেলনা কেনার সময় একজন সচেতন অভিভাবক কিভাবে খেলনার নিরাপত্তা যাচাই করবেন এবং কোন ধরনের সার্টিফিকেশন চিহ্নগুলো লক্ষ্য করবেন?

উ: সত্যি বলতে, আমরা সবাই চাই আমাদের সোনামণিরা নিরাপদ খেলনা নিয়ে খেলুক। আমি যখন আমার ভাতিজির জন্য খেলনা কিনতে গিয়েছিলাম, তখন নিজেও এই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজেছি। খেলনার নিরাপত্তা যাচাই করাটা আসলে তেমন কঠিন কোনো কাজ নয়, যদি আমরা কিছু বিষয়ে মনোযোগ দিই। প্রথমে, খেলনার প্যাকেজিং খুব ভালো করে দেখুন। সেখানে কোনো স্বীকৃত নিরাপত্তা মানদণ্ড বা সার্টিফিকেশন চিহ্ন আছে কিনা, তা খেয়াল করুন। যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুনির্দিষ্ট কিছু সার্টিফিকেশন সব খেলনায় নাও থাকতে পারে, তবে CE (Conformité Européenne) mark, ASTM (American Society for Testing and Materials) বা ISO (International Organization for Standardization) এর মতো আন্তর্জাতিক মানের উল্লেখ থাকলে সেই খেলনা তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদ বলে ধরে নেওয়া যায়।দ্বিতীয়ত, খেলনার গন্ধ শুঁকে দেখুন। যদি খুব কড়া বা রাসায়নিকের মতো গন্ধ বের হয়, তাহলে সেই খেলনা এড়িয়ে চলা ভালো। বিষাক্ত রাসায়নিক প্রায়শই কড়া গন্ধের কারণ হয়। তৃতীয়ত, খেলনার গুণগত মান যাচাই করুন। খেলনাটি মজবুত কিনা, এর কোনো ধারালো প্রান্ত বা ছোট ছোট অংশ আছে কিনা যা শিশুরা গিলে ফেলতে পারে, তা দেখে নিন। রং উঠে যায় কিনা বা সহজে ভেঙে যায় কিনা, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থত, খেলনাটি কোন উপাদান দিয়ে তৈরি, তা যদি প্যাকেজিংয়ে উল্লেখ থাকে, তবে সেটি পড়ুন। প্রাকৃতিক কাঠ, ফুড-গ্রেড সিলিকন বা বিপিএ-মুক্ত প্লাস্টিকের খেলনা সাধারণত বেশি নিরাপদ। আমি নিজে সবসময় চেষ্টা করি এমন দোকান থেকে খেলনা কিনতে, যারা খেলনার গুণগত মান সম্পর্কে সচেতন এবং যেখানে ব্র্যান্ডেড খেলনা পাওয়া যায়। কারণ, প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত নিরাপত্তা মান বজায় রাখার চেষ্টা করে।

প্র: রাসায়নিক নিরাপত্তা ছাড়াও, রান্নাঘরের খেলনার নকশা এবং সামগ্রিক মান কিভাবে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলে?

উ: রাসায়নিক নিরাপত্তা তো বটেই, খেলনার নকশা এবং সামগ্রিক মান শিশুর বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাবুন তো, আপনার ছোট্ট সোনামণি একটা খেলনা নিয়ে খেলছে, কিন্তু সেটি বারবার ভেঙে যাচ্ছে বা এর ধারালো অংশ দিয়ে হাত কেটে যাচ্ছে – এটা কি তার খেলার আনন্দ নষ্ট করবে না?
আমার মনে হয়, এটা কেবল আনন্দই নয়, শিশুদের মধ্যে একটা ভয়েরও জন্ম দিতে পারে।শারীরিক নিরাপত্তার দিক থেকে দেখতে গেলে, খেলনার নকশা খুব জরুরি। ছোট বাচ্চাদের জন্য ছোট ছোট অংশযুক্ত খেলনা মোটেও নিরাপদ নয়, কারণ সেগুলো তারা মুখে দিয়ে শ্বাসরোধের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। খেলনার কোনো ধারালো অংশ বা ভাঙ্গা অংশ থাকলে তা শিশুর ত্বকে আঘাত করতে পারে। একটি ভালো নকশার খেলনা, যা মজবুত এবং শিশুর বয়স উপযোগী, তা শিশুর সূক্ষ্ম মোটর দক্ষতা (fine motor skills) এবং স্থূল মোটর দক্ষতা (gross motor skills) বিকাশে সাহায্য করে।আর মানসিক বিকাশের কথা যদি বলি, তাহলে খেলনার মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো মানের, টেকসই খেলনা শিশুরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করতে পারে, যা তাদের সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তিকে উৎসাহিত করে। যখন একটি খেলনা সহজে ভেঙে যায়, তখন শিশুদের হতাশা বাড়ে এবং তারা খেলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে, একটি ভালো খেলনা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশে সাহায্য করে। রান্নাঘরের খেলনার ক্ষেত্রে, ভালো মানের খেলনাগুলো বাস্তবসম্মত হতে পারে, যা রোল-প্লেয়িং এর মাধ্যমে শিশুদের সামাজিক দক্ষতা এবং আবেগ প্রকাশের ক্ষমতা বাড়ায়। তারা শেয়ার করা, সহযোগিতা করা এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে শেখে। আমি বিশ্বাস করি, শিশুদের জন্য খেলনা কেবল খেলার বস্তু নয়, এটি তাদের শেখার এবং বেড়ে ওঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই, আমরা যখন তাদের জন্য খেলনা কিনি, তখন সেটির সামগ্রিক মান এবং নকশা নিয়েও সচেতন থাকা উচিত।

📚 তথ্যসূত্র